Nityananda Banerjee

Horror Crime Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

6 mins
164


দ্বিনবতিতম অধ্যায়

কি ছিল সেই ভিডিও ক্লিপিং এ ? টাকা পয়সা লেন দেনের কথা ? নাহ্ , তবে কি ?

সেই তো কোটি টাকার প্রশ্ন । আণ্ডার ওয়ার্ল্ডে কেউ টাকা পয়সাকে টাকা পয়সা বলে না । বাংলার বাইরে যাকে 'খোখা' বলে এখানে এই পশ্চিমবঙ্গে তাকেই বলে ' ঘোড়া ' । এই ঘোড়া মানে ঘোটক নয় ; গ্রাম বাংলার ' ঘড়া' অর্থাৎ কলসী । সুতরাং ঘোড়াকে যদি ঘোটক বলেন তবে ঘড়াকে 'ঘটক' বলতেই পারেন ।

এখানে আপাতত আমরা ঘোড়া বা ঘড়া নয় ; ঘটক কথাটিই বিশেষ করে উল্লেখ করছি এই কারণে যে ভেঙে দেওয়া বিধান সভার মুখ্যমন্ত্রী তথা দলীয় সভাপতি এবং তৎকালীন বিরোধী নেতা তথা তাঁর দলের সভাপতির মধ্যে একটি ক্যাজুয়ালী সমঝোতা হয় ।

খোদ পুলিশ কমিশনার তার সাক্ষী এবং নীরব দর্শক ও শ্রোতা ছিলেন । স্বয়ং কমিশনার যা দেখে এবং শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন ।

ত্রিলোকেশ্বরকে গুলিবিদ্ধ করে সোনু যাদবের পলায়নের সময় মহম্মদ সেলিম উপর্য্যুপরি গুলিতে সোনুর দেহ ক্ষতবিক্ষত করে মেরে ফেলে এবং সে নিজেও গুলি খেয়ে মরে । মিঃ রায়চৌধুরীর কথামত পুলিশ গিয়ে চারটি মৃতদেহ ( তার মধ্যে একটি ত্রিলোকেশ্বরের ডামি ) এই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় ।

তাঁদের আগে থেকেই দুই নেতা উপস্থিত হয়েছিলেন সেই হাসপাতালে । সৌজন্যে মহম্মদ সেলিম এবং সোনু যাদব । কারণ সোনু ছিল মুখ্যমন্ত্রীর দলের পোষা গুণ্ডা এবং স্বাভাবিক ভাবেই চাকরিচ্যুত হয়ে মহম্মদ সেলিম যোগ দেয় বিরোধী নেতার ছাতার তলায় ।

সেলিম জানত পুলিশ যতই তাকে নির্ভয় দিক না কেন ; অপারেশনের পর তার বেঁচে থাকা অসম্ভব । সেজন্য নেতাকে জানিয়ে দেয় ত্রিলোকেশ্বরের মৃত্যুর কথা ।

অপরদিকে সোনু যাদবও তার কৃতিত্বের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেয় । বিরোধী দলনেতা তাঁরই দলের প্রার্থীর খুন হওয়া নিয়ে চেঁচামেচি করার ইচ্ছা থাকলেও যেহেতু রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রাজ্যপাল তথা বকলমে কেন্দ্র ; তাঁর বোবার গুড় খাওয়ার মত দশা হয়ে গেল ।

এদিকে শাসক দলের কর্তাও তথৈবচ । সমাজবিরোধীদের হাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু প্রচারে তেমন সাড়া মিলবে না ভেবে চুপ করে গেলেন।

কোন পক্ষই কিছু বলছে না দেখে পুলিশ রশাসনও স্বস্তির শ্বাস নিল । ঠিক সেই সুযোগে দুই নেতা স্থির করলেন ওই হাসপাতালের কর্তা মিঃ ঝুনঝুনওয়ালার কাছে দরবার করবেন ।

নিকটবর্তী হাসপাতাল সেটাই । সেইজন্য মৃতদেহগুলি পরীক্ষার জন্য ওই হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হল । দুই নেতা ঝুনঝুনওয়ালাকে ব্যবসা সম্প্রসারণের লোভ দেখিয়ে এবং তাৎক্ষণিক কয়েক কোটি টাকা অফার করলেন - মিঃ ঝুনঝুনওয়ালা ! আমাদের তরফ থেকে আপাতত এই ঘোড়াটা রাখুন । আর এমন একজন ডাক্তারকে ইমারজেন্সিতে রাখুন যে আমাদের কথামত কাজ করবে ।

মিঃ ঝুনঝুনওয়ালা ভুনেশ্বর ভুঁইয়া নামে একজন আর এম ওকে সেই দায়িত্ব দিলেন ।দুই নেতা মিলে কয়েক লাখ টাকা দিয়ে বললেন - ত্রিলোকেশ্বর রক্ষিতকে পরীক্ষা করে বলবেন ' হি ইজ স্টিল এলিভ ' এবং ভেন্ঠিলেটর খালি রাখা আছে; তখনই আটতলায় ২১০ নং রুমে ওকে পাঠিয়ে দেবেন । বাকিদের পুলিশ নিয়ে যাবে পোস্টমর্টেম করতে । আপনার কাজ শেষ।

আর এম ও মিঃ ভুঁইয়া সামান্য কাজের জন্য অতগুলো টাকা পেয়ে নির্দেশমত কাজ করল ।

তারপর মিঃ ঝুনঝুনওয়ালা ডাকলেন ডক্টর ভরদ্বাজকে । আরও দশজন ডাক্তারকে ডেকে বললেন - মিঃ রক্ষিতের দেখভাল করবেন আপনারা ।

সকলে একবাক্যে বললেন - বাট হি ইজ ডেড ।

- ও সব ছাড়ুন। যা বলছি করতে হবে । অন্যথা হলে চাকরি কেড়ে নেব এবং ভবিষ্যত ডুম করে দেব । আমার উপর রাজনৈতিক চাপ আছে । যদি বিশ্বাস না হয় সি এম এবং অপোজিশন লিডারকে ফোন করে জেনে নিন ।

ওঁরা চুপ করে গেলেন । বাধ্য হয়ে কর্তার ইচ্ছেপূরণ করতে লাগলেন ।

এরই মধ্যে মিঃ উৎসব রায়চৌধুরীর ফোন পেলেন ডক্টর ভরদ্বাজ । নিজেকে 'র' এর প্রাক্তন গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে দেখা করতে সময় চাইলেন ।

ডক্টর ভরদ্বাজ তাঁর বাড়ীতে মিঃ রায়চৌধুরীকে আমন্ত্রণ করে সব কথা জানিয়ে তাঁদের বিপদে সাহায্য করতে বললেন।

মিঃ রায়চৌধুরী তাঁকে গোপন ভিডিওতে ঝুনঝুনওয়ালা ও তাঁদের মধ্যেকার কথাবার্তা রেকর্ড করতে বললেন ।

ডক্টর ভরদ্বাজ বললেন - আমরা তা করে রেখেছি ।

বড়দা বললেন - আপনারা কোন টাকা পয়সার লেনদেনে জড়িত নন তো ?

- একদম না । আর ঝুনঝুনওয়ালার মত কঞ্জুস ব্যক্তি এগারোজন ডাক্তারকে টাকা দেবেন ! কখনোই না । মাইনে দিতেই দেরী করেন প্রতিমাসে । নেহাৎ ডাক্তার বলে কথা ও টুকু মাইনের জন্য তো আমরা হাপিত্যেশ করে বসে নেই ।

সব ক্লিপিং দেখে কমিশনার আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন । মিঃ ঝুনঝুনওয়ালাকে বললেন - যে দু'জন নেতার কথায় এমন কাজ করেছেন তাঁরা কে কে ?

ঝুনঝুনওয়ালা হাসিতে গড়িয়ে পড়লেন - নাম বতাউঁ সাব ? দেখিয়ে অপনা প্যান্ট না গিলা হো যায়ে ।

ঠাস করে ঝুনঝুনওয়ালার গালে একটি থাপ্পড় কষিয়ে কমিশনার বললেন - শালা কুত্তার বাচ্চা ! বেওসা করবি ? বেওসা ? ভটচাজ খাতির কর বেটাকে ।

মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য ঝুনঝুনওয়ালারর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে কপাট বন্ধ করে দিলেন । মিঃ মুখার্জীও সেখানে ছিলেন ।

নিমেষে হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়লেন ওর উপর । ঝুনঝুনওয়ালা বুঝে গেল এখন কেউ তাকে বাঁচাবে না । সব কিছু ঘটনা নিজের হাতে লিখে জমা দিলেন ওঁদের হাতে ।

কমিশনার সাহেব কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না । একে তো নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে গেছে তায় আবার দু' দুজন হাই-প্রোফাইল নেতা কেসে জড়িত ।

বললেন - মুখুজ্যে ! এই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দেখতেই তো পাচ্ছো অবস্থা । কি করা যায় বল দেখি ?

- আপাতত কিছু করার নেই স্যার । পুলিশকে এখন নীরব থাকতে হবে ।

- মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো ! মনে হয় চাকরি বাকরি ছেড়ে চলে যাই ।

মিঃ মুখার্জী বললেন - পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া গতি কি ?

- আর রাখো তোমার পরিবর্তন । দেশে গুণ্ডারাজ চললে পরিবর্তন আসবে কি করে !

- না স্যার । পাবলিক তো আর বোকা নয় , ঠিক পথ দেখিয়ে দেবে ।

- বোকা নয় ঠিকই; কিন্তু প্রতিবারই তো ধোঁকা খাচ্ছে ।

- একটা কথা বলি স্যার । আপনি সিনিয়র আই পি এস । অথচ দেখুন আপনার মাথার উপরে যিনি ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, তাঁর বিদ্যের দৌড় ক্লাস ফোর । এ কেমন রাষ্ট্রব্যবস্থা স্যার ।

- সেটাই তো বলছি মুখুজ্যে । লেখাপড়া শিখে কি আর করলাম ! অশিক্ষিত থাকলে তবু তো বিবেকের জ্বালা সইতে হত না !

- নেতাজী সুভাষ সাধে কি বলেছিলেন স্বাধীনতার পর অন্তত দশ বছর ভারতবর্ষকে সামরিক শাসনে রাখতে!

- একদম সঠিক বলেছিলেন । তাহলে জাতি অন্তত শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে পারত । এখন সে কথা বললে নেতারা রে রে করে তেড়ে আসবে । গেল গেল রব তুলে বলবে এরা ভারতবর্ষকে পাকিস্তান বানাতে চাইছে। কি জ্বালা !

কমিশনার সাহেব বললেন - ছাড়ো ওসব ! ডেডবডি কি পোস্টমর্টেমে গেছে ।

- হ্যাঁ স্যার । মিঃ ভট্টচার্য্য নিয়ে গেছেন ।

- আর ওঁর পরিবারের লোকজন ?

- ওঁদেরও নিয়ে গেছেন । বডি হ্যাণ্ড ওভার দিতে ।

- ভটচাজকে বলো রিপোর্ট নিয়ে যেন সোজা লালবাজারে চলে আসে । ওই রিপোর্টেই জানা যাবে কখন ওঁর মৃত্যুটা হয়েছে।

কথা শেষ হয় না । হন্তদন্ত হয়ে মিঃ ভট্টাচার্য্য ঢুকলেন চেম্বারে ।

তাঁকে দেখে কমিশনার বললেন - কি ভটচাজ, রিপোর্টেও কিছু কারচুপি আছে নাকি ?

বিনীত স্বরে উৎফুল্ল পরমেশ্বর বললেন - না স্যার । মৃত্যুর সময় লেখা হয়েছে ২৩ তারিখ বেলা দুটো থেকে আড়াইটের মধ্যে ।

লাফ দিয়ে উঠলেন মিঃ মুখার্জী ।

- তবে তো প্রমাণ হয়েই গেল ঘোষক ডাক্তার মিথ্যে বলেছিলেন।

কমিশনার নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিলেন - সে তো ভিডিও ক্লিপিং এও রয়েছে । আমার ভয় ছিল পোস্টমর্টেমের ডাক্তারবাবু আবার চাপে পড়ে মিথ্যে রিপোর্ট দেন ।

পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য বললেন - তেমন কিছু হয়নি স্যার । হয়তো আর সুযোগ পাননি নেতারা ।

মিঃ মুখার্জী বললেন - ডেডবডি পরিবার নিয়ে গেলেন ?

- ওঁরা বডি নিতে অস্বীকার করেছিলেন । অনেক অনুরোধ করার পর পুলিশ থেকে পরিবারের সামনে দাহ করতে নিমতলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । তারপর তো জানি না।

মিঃ মুখার্জী উৎসব রায়চৌধুরীকে ফোন করে বলতেই মিঃ রায়চৌধুরী বললেন - হ্যাঁ, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । গোটা শরীরে ম্যাগট ধরে গিয়েছিল বলে আমরা কেউ হ্যাণ্ড ওভার নেইনি । তবে পুলিশ খুব হেল্প করেছে । নিজেরা উদ্যোগী হয়ে দাহকার্য্য শেষ করেছে । এ লট অফ থ্যাঙ্কস টু ইয়োর ডিপারটমেন্ট ।

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror