প্রকৃত মানুষ
প্রকৃত মানুষ
যে মমতাময়ী মা রাতের পর রাত জেগে
তাঁর সন্তানের দেখাশোনা করেছিলো,
যে মা নিজের খাওয়া ঘুম ভুলে
সন্তানের পরিচর্যা করেছিলো,
যে মা নিজের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে
সন্তানের ভবিষ্যত গড়তে ব্রতী ছিলো,
যে মা সন্তানের মঙ্গল কামনায়
দিনের পর দিন উপোস করে ব্রত রেখেছিল-
সেই মা আজ সফল হয়েছে।
তাঁর সন্তান আজ সুপ্রতিষ্ঠিত-
উচ্চশিক্ষিত,বড় চাকুরে,ধনী-সম্ভ্রান্ত।
আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ে মায়ের চোখে,
তাঁর নয়নের মণি আজ তাঁর গর্ব।
সময়ের প্রবাহে কিছু বছর গিয়েছে বয়ে,
আজ সেই সন্তানের সুখী সংসার
স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে।
বিশাল আলিশান প্রাসাদোপম বাড়ি,
আসবাবপত্র দামি দামি।
ঘরময় ছড়িয়ে আছে
গৃহসজ্জার বিদেশী সামগ্রী,
সারা ঘরে ভরা সুখ,প্রাচুর্য,সমৃদ্ধি।
তাই এই আলো ঝলমলে আলিশান বাড়িতে,
হয়নি জায়গা লোলচর্ম বৃদ্ধা মায়ের।
বড়ই ম্রিয়মান-বড়ই বেমানান-
কি দরকার তাকে সাথে রাখবার!
উপযুক্ত ছেলে-নিয়মিত
মায়ের খোঁজখবর নেয়,
কোন অভাব রাখে নি তো তাঁর-
প্রয়োজনে সব টাকা-পয়সাও দেয়।
আজ বাড়িতে বড় পার্টি,
চলছে তার রমরমা আয়োজন।
ফোন বেজে উঠলো-
“খোকা শরীরটা বড় খারাপ লাগছে,
একটিবার আয় না কাছে।”
“উফ্ মা” আজ আমি বড় ব্যস্ত,
কেন যে বারবার করো বিরক্ত!
রোজ রোজ নানা বাহানায়
এমন কি ছুটে আসা যায়!
জীবনে এখন বড়ই ব্যস্ততা,
আমাদের চাকরি,ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার চাপ!
তাই চিত্তবিনোদনের জন্য মাঝেমধ্যে পার্টি করা দরকার।
ফোন রাখো-কাল দেখা হবে।”
অতিথি-অভ্যাগতের আপ্যায়ন,
গল্প,আড্ডা-আনন্দ-ভুড়িভোজ সব হলো সমাপন।
ফুরফুরে মনে সুখনিদ্রা দিয়ে
প্রভাতে জেগে মনে পড়ে মায়ের কথা-
ধীর পদে যায় মা’র কাছে,
মা এখনো শুয়ে আছে-
শান্ত,সৌম্য,স্নিগ্ধ-নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে-চিরনিদ্রায়-
আর কখনো ডাকবে না খোকা বলে,
আর কখনো বলবে না খোকা আয় কাছে।
আর কখনো পার্টিতে হবে না কোন ব্যাঘাত,
আজ মা হয়েছে চিরশান্ত।
সজল নয়ন-লজ্জায়-দুঃখে মা’র হাত ধরে,
মায়ের বন্ধ মুঠিতে ধরা চিরকুট-
‘ভালো থাকিস খোকা।’
আজ অশ্রু বাঁধ ভাঙলো-
গ্লানিতে ভরে গেল মন,
বিবেকের দংশনে হলো দংশিত।
আজ উপলব্ধি হলো-
মা ছিলেন বড় নিঃসঙ্গ-একা।
টাকা-পয়সা নয়,
চেয়েছিলেন কাছে তাকে।
আদর্শ বন্ধু,স্বামী,পিতা,বড় চাকুরে-
সব হতে পেরেছে সে,
শুধু পারেনি আদর্শ সন্তান হতে।
নাম,যশ,সুখ,অর্থ-সব পেয়েছে সে জীবনে,
কিন্তু পারেনি সে প্রকৃত মানুষ হতে