নহর
নহর
যে নহরটা উচ্ছল তরুণীর মতো-
এঁকেবেঁকে যাচ্ছিল আমার বাড়ির পাশ দিয়ে,
যার শীতল হাওয়ায় জুড়িয়ে যেত
সকলের দেহ,মন প্রাণ,
প্রখর খরায় যার জলে
সিঞ্চিত হতো কৃষকের চাষের জমি,
যার জলে রং-বেরঙের মীনরা করতো জলকেলি,
যার স্ফটিক শীতল জলে
তৃষ্ণা নিবারিত হতো পরিযায়ী বিহঙ্গের,
যার জলে প্রস্ফুটিত হতো
লাল-সাদা রঙের শাপলা-পদ্ম,
আজ সেই নহরটার অস্তিত্ব লুপ্ত হতে চলেছে।
কেউ নেই তার সাথে।
এতোদিন জীবজগতের সহায়তায়
কত ভাবে নিজেকে উজার করে দিয়েছে সে,
সবার জন্য এত কিছু করতে পেরে
নিজেকে বুঝি বা সার্থক ভেবেছে।
আজ তারা কেউ নেই তার পাশে,
আজ তারা কেউ নেই তার সাথে।
সবাই শুধু বিরস বদনে দেখছে-
সবাই শুধু ম্লান মুখে হাহুতাশ করছে।
না কোন পরিবেশ স্বেচ্ছাসেবক,
না কোন নেতা-
কেউ এগিয়ে এলো না- তার রক্ষার্থে,
সবাই যেন চলেছে নিজ নিজ স্বার্থে।
বড় কোন প্রোমোটার এখানে
বানাবেন গগনচুম্বী আবাসন,
হবে জায়গার উন্নয়ন,
হবে অনেক লোকের রুজি-রোজকার-কর্মসংস্থান,
হবে অনেকের আলিশান বাসস্থান।
তাই জোর কদমে চলছে মাটি দিয়ে
নহর ভরাট করার কাজ,
নহরের কথা ভাবার সময় কারো নেই আজ।
আবাসনের ভেতরেই তো থাকবে
জলের কৃত্রিম ফোয়ারা-সুইমিং পুল!
উন্নয়ন আটকে-নহরকে বাঁচানোর প্রয়াস করা তাই ভুল।
সবাই বুঁদ হয়ে আছে উন্নয়নের নেশায়,
সামান্য নহরের চিন্তা করা কি তাদের মানায়!
কেউ শুনলো না মাছেদের আর্তনাদ,
কেউ শুনলো না কৃষকের হাহাকার।
কেউ দেখলো না পাখিদের আকুতি,
পদ্ম-শাপলা মূর্ছা গেল মাটির ঘায়ে,
নহর বুজে গেল-
স্বার্থান্বেষী মানুষের কাছে প্রকৃতি
আরও একবার পরাজিত হলো।