মৃত্যু মিছিল
মৃত্যু মিছিল
মৃত্যু মিছিল চলেছে ধরার বুকে
শোকস্তব্ধ চারিদিক,
ঘরে ঘরে শুধু ক্রন্দন ধ্বনি
আর শোকে দুঃখে পাথর লোক।
নেই কোন শোরগোল,
নেই কোন উচ্ছাস,
নেই কোন তাড়াহুড়ো,
নেই কোন উদ্যম।
শান্ত ধীর পদে মৌন মিছিল
চলেছে এগিয়ে,
কারো ইচ্ছে নেই
এ মিছিলে যোগদানের,
কারো মন নেই এ মিছিলে
সামিল হওয়ার।
তবু বেড়েই চলেছে
মিছিলের জনসংখ্যা,
কপালে সবার চিন্তার বালিরেখা।
নিজের অজান্তেই কে যে কবে
যোগ দেবে এই দলে!!
সংখ্যা টা যাবে আরও বেড়ে।
কুন্ডলী পাকানো কালো শোকের
ছায়ায় আকাশ গিয়েছে ছেয়ে,
সারাদিন শুধু শোনা যায়
ঢং ঢং মৃত্যুর ঘন্টা,
উচাটন মনটা বড়ই
আতঙ্কগ্রস্ত আজ।
সবাই যেন ভুলে গেছে হাসতে,
মনে চাপা উৎকন্ঠা-
চোখে মুখে সদা ভয়-
কান পেতে যেন শুনছে মৃত্যুর পদধ্বনি।
কারো জানা নেই
কোন অজানা পথে
সে শরীরে করবে প্রবেশ,
কারো জানা নেই কতটা
আঘাত হানবে সে দেহে মনে।
বন্ধ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
বন্ধ সব কল-কারখানা,
বন্ধ সব অফিস-আদালত,
বন্ধ সব কাম কাজ।
মৃত্যুর অদৃশ্য ফেরিওয়ালা
চলেছে হেঁকে-
‘মৃত্যু নেবে গো মৃত্যু!
ছুটে এসো বাইরে সবাই-
মৃত্যু দিচ্ছি আমি বিলিয়ে।
নেই কোন ভেদাভেদ
লাগবে না কোন দাম,
মুঠো করে যাও নিয়ে-
দাও ছড়িয়ে পরিবার পরিজনে’।
ভয়ে সব জবুথবু-
নাকে মুখে মাস্ক পরে
স্যানিটাইজার মেখে হাতে,
দূরত্ব বজায় রেখে রাতদিন চলছে
ভালো থাকার পরিকল্পনা,
চলছে বাঁচার লড়াই।
ডাক্তারদের চলেছে নিরলস প্রয়াস,
স্বেচ্ছাসেবীরা করছেন নিরন্তর প্রচেষ্টা,
বিজ্ঞানের হাত ধরে চলেছে
জেতার লড়াই।
জিতেও যাব একদিন
হাসি ফুটবে সবার মুখে
পৃথিবী-চন্দ্র-সূর্য সব চলবে
নিজের নিয়মে-নিজের সময়ে।
কিন্তু হয়তো হারাবো অনেক কিছু,
হয়তো খালি হবে কিছু মায়ের কোল,
হয়তো কোন সন্তান আর পাবে না
মায়ের স্নেহের আঁচল,
কিছু ভাইয়ের হাতে কেউ
আর বাঁধবে না রাখী,
কিছু সন্তান হারাবে তাদের
পিতার নিশ্চিন্ত ছত্রছায়া,
কিছু ভাই আর এগিয়ে আসবে না
বোনের সন্মান রক্ষার্থে।
কিছু প্রতিবেশী আর বাড়াবে না
সাহায্যের হাত,
থাকবে না সুখে দুঃখে কাছে পাওয়া
কিছু বন্ধুর কাঁধ,
হারাবো কিছু নিরলস সেবাকর্মী,
হারাবো কিছু দেশরক্ষক সৈনিক।
হারাবো কিছু জ্ঞানী-গুণী
কিছু মহানুভব আদর্শ মানব।
এ ক্ষতি অপূরণীয়-এ ক্ষতি পুরো বিশ্বের।
তাই এসো না থাকি কিছুদিন
পরিবারের সাথে একান্তে নিভৃতে ঘরে,
সেরে উঠুক পৃথিবী বিজ্ঞানের হাত ধরে,
হাসি মুখে দেখা হবে আবার
মহামারীর পরে।