গদ্য কবিতা–মল্লিকা দিদিমণি।
গদ্য কবিতা–মল্লিকা দিদিমণি।
আমাদের পাড়ার মল্লিকাদি খুব হাসিখুশি
দু'বছর হলো রিটায়ার্ড করেছেন স্কুল থেকে।
এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন, ব্যাঙ্গালোরে থাকে।
ভোরবেলা মর্নিংওয়াক সেরে চা নিয়ে বাগানে বসেন
সারাদিন কাজের ফাঁকে ছোটো বাগানে
অনেকখানি সময় কাটে তার।
স্বামীর সহযোগিতায় নানা রকম গোলাপ রঙ্গন
জবা বেলি রজনী স্থলপদ্ম দিয়ে সাজিয়েছেন বাগান।
শীতকালে চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া গাঁদা আলো করে থাকে তার বাগান
সেখানে একবার ঢুকলে মন ভরে যায়।
ওনার স্বামী নিখিলেশ রায় ভারী মিশুকে মানুষ,
প্রতিদিন সামনের বাজার থেকে টাটকা সবজি ছোটোমাছ নিয়ে আসেন
সিডিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালিয়ে দুজনে গলা মেলান কাজ সারেন।
মাঝে মাঝে দু'তিন দিনের জন্য প্রকৃতির বুকে হারাতে
বেরিয়ে পড়েন মন্দির পাহাড় সাগর কিংবা জঙ্গলে।
ট্যুর থেকে ফিরে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কাজ করেন
রাস্তায় পুরোনো ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা হলে
কুশল বিনিময় করেন দিদি।
নিজের জন্মদিনে কোনো অনাথ আশ্রমে গিয়ে সারাদিন কাটান
প্রতিদিন দুপুরে অলসভাবে শুয়ে না থেকে
নিজের ইচ্ছে, স্বপ্ন, অনুভূতির জ্বাল বোনেন ডাইরীর পাতায়।
রাত্রে শোবার আগে ঘণ্টাখানেক গল্পের বই নিয়ে বসেন।
একদিন শীতের সকালে মল্লিকাদির বাড়ি গিয়ে দেখি
সদ্য স্নান সেরে বাগানে পুজোর ফুল তুলছেন।
আমাকে বসতে বলে পুজো সারলেন
একমুখ হাসি নিয়ে কফির কাপ হাতে এগিয়ে এলেন।
লালপাড় সাদা শাড়ি কপালে লাল টিপ
খোলা চুলে মা সরস্বতী লাগছে দিদিকে।
"আপনি এতো হাসিখুশি কি করে থাকেন দিদি ?"
আবার হেসে বললেন "আসলে আমার কোনো লোভ বা চাহিদা নেই
ফুলগাছ পাখি গানের সাথে কিভাবে সময় কেটে যায়
তাছাড়া বেড়ানো আর আমার প্রিয় গল্পেরবইরা তো আমার অক্সিজেন।"