বারবণিতা
বারবণিতা
সমাজের চোখে আমি নষ্ট মেয়ে,
আমি পতিতা,আমি অসতী, আমি বারবণিতা।
আচ্ছা কেউ কি পতিতা হতে চায়?
কেউ কি স্বেচ্ছায় পতিতা হয়?
কোন পুরুষ না ছুঁলে
কোন মেয়ে নিজে কি নষ্ট হতে পারে?
কেউ কি এর উত্তর দেবে আমাকে?
কারো কি আছে এর উত্তর জানা!
যারা আমায় নষ্ট করেছে
তারা দোষী নয়!
নেই তাদের কোন অপরাধ!
সমাজ! অকারণে আমায়
কেন দাও ধিক্কার!
আমিও সবার মত চেয়েছিলাম
স্বামী,সন্তান।
ভেবেছিলাম একদিন আমারও হবে
সাধের সংসার।
চেয়েছিলাম নিবিড় ভালোবাসা।
হ্যাঁ পেয়েছিলাম-পেয়েছিলাম
মিথ্যে সে ভালোবাসা।
তা ছিল কপট রঙ্গ-
তা ছিল কপট ছল।
চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে
সরল বিশ্বাসে ভালবাসার হাত ধরে
ছেড়েছিলাম ঘর,
স্বপ্নের ও অতীত-
সে ছিল পতিতালয়ের চর।
পতিতালয়ে কাটল আমার
প্রথম বাসর রাত।
অনেক আকুতি, মিনতি,
কান্না চিৎকার- সব বৃথা-
পাষাণ দালালের হৃদয় গললো না।
সে ফেলে গেল আমায়-
নিয়ে গেল ভালবাসার নগদ মূল্য,
প্রেমিকা থেকে হয়ে গেলাম আমি
নিষিদ্ধ পল্লীর পণ্য।
সেই থেকে শুরু-অন্ধকার
কলঙ্কিত জীবন,
যেখানে রোজ বিক্রী হয় দেহ,
ছিন্নভিন্ন হয় মন।
কোন বাড়ির সুবেশ ছেলে,ভাই,স্বামী
বা বাবা সবাই এখানে এসে-
লজ্জা,ঘৃণা,কষ্ট আর বুকফাটা
কান্নার নিষ্ঠুর আল্পনা এঁকে দিয়ে যায়
অসহায় মেয়ের দেহে,মনে, বুকে।
ভদ্রতার মুখোশ পড়ে বাড়ি ফেরে,
কোন কলঙ্কই লেখা থাকে না
তার গায়ে।
বাড়িতে এদের ভুরু কুঁচকে ওঠে-
পরিবারের সাথে বসে
দূরদর্শনের পর্দায় কোন
নিষিদ্ধ পল্লীর সংবাদ দেখে।
মনের কালিমা,লালসা আর
বিকৃত মানসিকতা সব
চাপা পড়ে যায়
ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে।
কোন সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায়
ফিরেছিলাম বাড়ি-
হয়নি জায়গা সেখানে-
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বাবা-মা
সমাজ আর কলঙ্কের ভয়ে।
দাদা জানিয়েছে তিরস্কার,
ছোট বোন উঠেছে নাক সিঁটকে,
বুঝলাম মেয়ে,দিদি,বোন নয়-
বারবণিতা এখন আমার একমাত্র পরিচয়।